চুল পড়ার পেছনে গম দায়ী, গবেষণায় উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

মহারাষ্ট্রের বুলধানা জেলায় সম্প্রতি ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ হঠাৎ চুল পড়া এবং টাক পড়ার সমস্যায় ভুগছেন। পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাঃ হিম্মতরাও বাওয়াস্কারের গবেষণায় উঠে এসেছে যে এই সমস্যার পেছনে দায়ী গমে সেলেনিয়ামের উচ্চ মাত্রা। এই প্রতিবেদনে সেলেনিয়াম কী, এটি কীভাবে গমকে দূষিত করে এবং এর ফলে কী ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

আজকের যুগে ব্যক্তিগত চেহারা আত্মসম্মান এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই হঠাৎ চুল পড়া বা টাক পড়ার সমস্যা মানসিকভাবে ভীষণভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। ঘন চুল বা ঝরে পড়া চুল ব্যক্তিত্বের প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হয়। সাধারণত মানুষ টাক পড়া বা চুল পাতলা হয়ে যাওয়া লুকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু মহারাষ্ট্রের বুলধানা জেলায়, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে, হঠাৎ চুল পড়া বা টাক পড়ার সমস্যা দেখা দেওয়ায় এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের খাওয়া গমে সেলেনিয়ামের উচ্চ মাত্রাই এই সমস্যার মূল কারণ। সেলেনিয়াম কী, এটি কীভাবে গমে মিশেছে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের দূষণ কীভাবে রোধ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

বুলধানা জেলায় চুল পড়ার সমস্যা

বুলধানা জেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা হঠাৎ করেই চুল পড়া এবং টাক পড়ার সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন। বিশেষজ্ঞরা এই সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তরুণী এবং কলেজ ছাত্রীরা এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ কেউ এতটাই বিব্রত বোধ করেছেন যে বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন, আবার কেউ কেউ মাথা কামিয়ে ফেলেছেন।

গমে সেলেনিয়ামের উচ্চ মাত্রা

ডাঃ হিম্মতরাও বাওয়াস্কর, যিনি বিচ্ছু কামড়ের চিকিৎসার জন্য সুপরিচিত এবং পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত, এই সমস্যার তদন্তে নেমে আবিষ্কার করেন যে সরকারি রেশন দোকান থেকে সরবরাহ করা গমে সেলেনিয়ামের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বেশি। এই গম পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা থেকে আমদানি করা হয়েছিল। সেলেনিয়াম একটি প্রয়োজনীয় খনিজ, তবে অতিরিক্ত মাত্রায় এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

সেলেনিয়ামের প্রভাব

সেলেনিয়াম আমাদের শরীরে অক্সিডেটিভ ক্ষতি রোধ করতে এবং থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত সেলেনিয়াম গ্রহণ করলে সেলেনোসিস নামক একটি অবস্থা দেখা দিতে পারে, যার ফলে চুল পড়া, নখ ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া, ত্বকের সমস্যা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।

সেলেনিয়াম একটি অপরিহার্য খনিজ, তবে এটি অল্প পরিমাণে প্রয়োজন। এটি গ্লুটাথিয়ন পারক্সিডেসের মতো এনজাইম তৈরিতে সাহায্য করে, যা কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। কিন্তু উচ্চ মাত্রার সেলেনিয়াম শরীর সঠিকভাবে বিপাক করতে পারে না, ফলে এটি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। চুল পড়া এই বিষক্রিয়ার একটি প্রধান লক্ষণ, কারণ অতিরিক্ত সেলেনিয়াম চুলের ফলিকলের কার্যকারিতায় বাধা সৃষ্টি করে।

গমে সেলেনিয়ামের মাত্রা কতটা বেশি?

ডাঃ বাওয়াস্কর বুলধানা জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে গমের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেন। ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় দেখা যায়, গমে সেলেনিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে আট গুণ বেশি। না ধোয়া গমে প্রতি কেজিতে ১৪.৫২ মিলিগ্রাম এবং ধোয়া গমে প্রতি কেজিতে ১৩.৬১ মিলিগ্রাম সেলেনিয়াম পাওয়া গেছে, যা নিরাপদ মাত্রার (১.৯ মিলিগ্রাম/কেজি) থেকে অনেক বেশি।

জিঙ্কের অভাবও একটি কারণ

গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে জিঙ্কের মাত্রা কম। জিঙ্ক চুলের বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ সেলেনিয়াম এবং কম জিঙ্কের সংমিশ্রণ অ্যালোপেসিয়ার সমস্যাকে আরও ত্বরান্বিত করে।

গম কীভাবে দূষিত হচ্ছে?

ডাঃ বাওয়াস্কর ব্যাখ্যা করেন যে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার শিবালিক পর্বতমালার পাদদেশে প্রাকৃতিকভাবে সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ শিলা রয়েছে। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি এই শিলাগুলিকে দ্রবীভূত করে এবং সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ পলি কৃষি জমিতে প্রবাহিত হয়। এর ফলে মাটি সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে হোশিয়ারপুর এবং নওয়ানশহর জেলায় এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

ভবিষ্যতে কী করা যেতে পারে?

এই সমস্যা সমাধানের জন্য গমের উৎপাদন এবং সরবরাহ প্রক্রিয়ায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। মাটি এবং শস্যে সেলেনিয়ামের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। এছাড়াও, জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে যাতে তারা দূষিত গম এড়াতে পারে এবং বিকল্প খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করতে পারে।

উপসংহার

মহারাষ্ট্রের বুলধানা জেলায় হঠাৎ চুল পড়ার সমস্যা সেলেনিয়াম দূষণের একটি উদাহরণ। এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়। সেলেনিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় খনিজের সঠিক মাত্রা বজায় রাখা এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

1 thought on “চুল পড়ার পেছনে গম দায়ী, গবেষণায় উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য”

Leave a Comment