পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) নিয়োগে কারচুপির অভিযোগে ২৬,০০০ শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বাতিলের মামলায় নতুন তথ্য এসেছে। ইতিমধ্যেই এই মামলা দেশের শীর্ষ আদালতে পৌঁছেছে, এবং তদন্তে নিয়োজিত রয়েছে সিবিআই। তবে, আদালতের পক্ষে এই মামলার আসল তথ্য জানা কঠিন হয়ে পড়েছে, কারণ মূল ওএমআর শিট না থাকায় প্রমাণ সংগ্রহে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ওপর অকারণ শাস্তির বোঝা চাপার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গত সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি হয়। বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্য শোনার পরেও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। সিবিআই পক্ষ থেকে কলকাতা হাইকোর্টের রায়, অর্থাৎ ২৬,০০০ শিক্ষক-শিক্ষিকাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। অন্যদিকে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টের রায় মেনে নিলে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে, যার প্রভাব সরাসরি পড়বে রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর।
আরও পড়ুন:- পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য বিভাগে হাউস স্টাফ পদে নিয়োগ, জানুন আবেদন পদ্ধতি, যোগ্যতা ও ইন্টারভিউর তারিখ
স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে পদমর্যাদা জাম্প এবং প্যানেল-বহির্ভূত নিয়োগের তথ্য থাকলেও, ওএমআর শিট কারচুপির প্রমাণ তাদের হাতে নেই। সিবিআই পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে এবং চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে থেকে যারা সদা খাতা জমা দিয়েছেন, এমন ব্যক্তিদেরও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে, মূল ওএমআর শিট না পাওয়ায় প্রমাণের অভাব আদালতের সিদ্ধান্ত নেওয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বিচারপতি সঞ্জীব খান্না নতুন করে পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব কিনা, সেই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এছাড়াও, কতজন যোগ্য এবং কতজন অযোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, সেই তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব কিনা, তা নিয়েও আদালত জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর ফলে ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি চলে যায়, এবং তাদের ১২ শতাংশ সুদসহ মাসিক বেতন ফেরত দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়।
কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে, এই মামলার সঠিক তথ্য এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই দাবি করছে যে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে এবং কলকাতা হাইকোর্টের রায়ই যথাযথ। তবে, এই রায় মেনে নিলে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
এই মামলার চূড়ান্ত রায় এখনও ঘোষণা করা হয়নি। বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এখনও এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। এই মামলার ফলাফল শুধু ২৬,০০০ শিক্ষক-শিক্ষিকার ভবিষ্যৎই নির্ধারণ করবে না, বরং পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থার ওপরও এর গভীর প্রভাব পড়বে।
1 thought on “স্কুল সার্ভিস কমিশন মামলায় নতুন তথ্য, ২৬,০০০ শিক্ষকের চাকরি বাতিল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের শুনানি”